বাংলাদেশের তৃণমূল পর্যায়ে ঋণ সেবা পৌঁছে দিতে এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বুরো বাংলাদেশ একটি সুপরিচিত নাম। ১৯৯০ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানটি দেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকে সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করছে।
আপনি যদি নিজের ছোট ব্যবসার প্রসার ঘটাতে, কৃষিকাজের পরিধি বৃদ্ধি করতে বা অন্য কোনো প্রয়োজনে ঋণ সহায়তা খুঁজে থাকেন, তবে বুরো বাংলাদেশ হতে পারে আপনার জন্য একটি নির্ভরযোগ্য সমাধান।
আজকের এই পোস্টে আমরা বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
Table of Contents
বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন কী?
বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন হলো একটি ক্ষুদ্রঋণ (Microfinance) সেবা। যা মূলত দেশের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে প্রদান করা হয়। এই লোনের মাধ্যমে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, কৃষক এবং নারীদের সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়, যেন তারা নিজেদের উদ্যোগে আয় বৃদ্ধি করতে পারেন।
কারা এই লোন পাওয়ার যোগ্য?
বুরো বাংলাদেশ নির্দিষ্ট কিছু শ্রেণীর মানুষকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে, যারা সরাসরি এই ঋণ কর্মসূচির আওতায় আসতে পারেন। যেমন:
- যারা দোকান, ছোট কারখানা বা অন্য কোনো ব্যবসা পরিচালনা করছেন বা করতে চান।
- যারা ফসল উৎপাদন, পশু পালন বা মৎস্য চাষের সাথে জড়িত।
- যেসব নারী নিজের উদ্যোগে ব্যবসা বা কুটির শিল্প পরিচালনা করতে চান।
- যারা আর্থিক স্বচ্ছলতা আনার জন্য কোনো উৎপাদনমুখী কাজ করতে আগ্রহী।
- দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য বিশেষ ঋণ সুবিধা।
লোন পেতে কী কী যোগ্যতা ও শর্তাবলী রয়েছে?
অন্যান্য এনজিওর মতোই বুরো বাংলাদেশ থেকে লোন পেতে কিছু সাধারণ যোগ্যতা ও শর্ত পূরণ করতে হয়। এগুলো হলো:
- আবেদনকারীর বয়স অবশ্যই ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে।
- আবেদনকারীকে বাংলাদেশের একজন স্থায়ী নাগরিক হতে হবে।
- বুরো বাংলাদেশের ঋণ পেতে হলে তাদের স্থানীয় সমিতির সদস্য হতে হবে।
- ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা প্রমাণের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য ও বৈধ আয়ের উৎস থাকতে হবে।
- আবেদনকারীর আর্থিক লেনদেনের রেকর্ড ভালো থাকতে হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
আবেদন প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য কিছু জরুরি কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। নিচে এর একটি তালিকা দেওয়া হলো:
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের (NID) ফটোকপি।
- আবেদনকারীর সদ্য তোলা ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- বর্তমান ঠিকানার প্রমাণ হিসেবে বিদ্যুৎ বা পানির বিলের ফটোকপি অথবা ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভার নাগরিকত্ব সনদ।
- ব্যবসার ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স (যদি থাকে)।
- একজন পরিচিত জামিনদারের তথ্য।
বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন সুদের হার
লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে সুদের হার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন পদ্ধতি অনুযায়ী, সুদের হার সরকারি নীতিমালা অনুসারে এবং গ্রাহক পর্যায়ে সহনীয় রাখা হয়।
সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, বুরো বাংলাদেশ ক্রমহ্রাসমান (Declining Balance) পদ্ধতিতে সুদ গণনা করে। এর অর্থ হলো, প্রতি কিস্তি পরিশোধের পর শুধুমাত্র অবশিষ্ট আসলের ওপর সুদ হিসাব করা হয়। ফলে, গ্রাহকের ওপর সুদের চাপ ধীরে ধীরে কমে আসে। লোনের ধরন ও পরিমাণ অনুযায়ী সুদের হারে কিছুটা পার্থক্য হতে পারে, তাই আবেদনের পূর্বে নিকটস্থ শাখা থেকে বিস্তারিত জেনে নেওয়াই শ্রেয়।
বুরো বাংলাদেশ লোন পাওয়ার সহজ পদ্ধতি
বুরো বাংলাদেশ থেকে লোন পাওয়ার প্রক্রিয়াটি বেশ সহজ। নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করে আপনি আবেদন করতে পারেন:
- প্রথমে আপনার এলাকার নিকটস্থ বুরো বাংলাদেশ শাখায় গিয়ে একজন কর্মকর্তার সাথে কথা বলুন।
- তাদের সমিতির সদস্য হয়ে একটি সঞ্চয়ী হিসাব খুলুন এবং নিয়মিত সঞ্চয় জমা শুরু করুন।
- লোন আবেদন ফরম সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় সকল তথ্য দিয়ে সঠিকভাবে পূরণ করুন।
- ফরমের সাথে উপরে উল্লিখিত সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করে দিন।
- আপনার আবেদন ও কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর একজন ফিল্ড অফিসার আপনার দেওয়া তথ্য যাচাই করার জন্য আপনার বাড়ি বা ব্যবসা কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন।
- সবকিছু ঠিক থাকলে সাধারণত ৭ থেকে ১৪ কার্যদিবসের মধ্যেই আপনার লোন অনুমোদন হয়ে যাবে এবং আপনার হাতে ঋণের টাকা হস্তান্তর করা হবে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
বুরো বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ কত টাকা লোন নেওয়া যায়?
লোনের পরিমাণ নির্ভর করে আপনার ব্যবসার ধরন, পরিশোধের ক্ষমতা এবং ঋণের প্রকারভেদের ওপর। এটি ৫,০০০ টাকা থেকে শুরু করে কয়েক লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
লোন পরিশোধের সময়সীমা কেমন?
সাধারণত সাপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তিতে লোন পরিশোধ করা যায়। পরিশোধের সময়সীমা লোনের পরিমাণ অনুযায়ী নির্ধারিত হয়।
লোন পেতে কি জামানত লাগে?
ক্ষুদ্র ঋণের ক্ষেত্রে সাধারণত কোনো বড় ধরনের জামানতের প্রয়োজন হয় না। তবে ঋণের পরিমাণ বেশি হলে সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী জামানতের প্রয়োজন হতে পারে।
নারীদের জন্য কি বিশেষ কোনো সুবিধা আছে?
হ্যাঁ, বুরো বাংলাদেশ নারী উদ্যোক্তাদের স্বাবলম্বী করতে বিশেষ ঋণ সুবিধা এবং সহজ শর্ত প্রদান করে থাকে।
শেষ কথা
আশা করি, এই পোস্টের মাধ্যমে আপনি বুরো বাংলাদেশ এনজিও লোন পদ্ধতি সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেয়েছেন। এটি বাংলাদেশের প্রান্তিক মানুষের জন্য একটি অসাধারণ সুযোগ। আপনার যদি আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন হয়, তবে আর দেরি না করে আজই আপনার নিকটস্থ বুরো বাংলাদেশ শাখায় যোগাযোগ করুন।





