বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে ব্র্যাক এনজিও লোন কয়েক দশক ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে ব্র্যাক ১৯৭২ সাল থেকে দেশের প্রতিটি প্রান্তে সাধারণ মানুষের আর্থিক স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছে।
আপনি যদি ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করতে, কৃষিকাজের পরিধি বাড়াতে, বা অন্য কোনো জরুরি প্রয়োজনে লোন নিতে চান, তবে ব্র্যাক হতে পারে আপনার আস্থার প্রতীক।
এই পোস্টে আমরা ব্র্যাক এনজিও লোন পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব এবং জানাবো কীভাবে আপনি সহজেই এই লোন পেতে পারেন।
Table of Contents
ব্র্যাক এনজিও লোন কী
ব্র্যাক এনজিও লোন মূলত এমন একটি আর্থিক পরিষেবা যা দেশের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। এর প্রধান লক্ষ্য হলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, কৃষক, নারী এবং আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের স্বাবলম্বী করে তোলা।
ব্র্যাক এনজিও লোন কারা পাবেন
সাধারণত, নিম্নলিখিত ব্যক্তিরা এই লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন-
- যারা ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনা করছেন বা নতুন করে শুরু করতে চান।
- গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তা।
- কৃষিকাজের সাথে জড়িত কৃষক।
- প্রবাসী বা তাদের পরিবারের সদস্যরা।
মূলত, বাংলাদেশের গ্রামীণ বা শহরাঞ্চলের যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক, যিনি নির্দিষ্ট যোগ্যতা পূরণ করতে পারবেন, তিনিই এই লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন এবং লোন নিতে পারবেন।
ব্র্যাক এনজিও লোন পাওয়ার যোগ্যতা
ব্র্যাক এনজিও থেকে লোন পেতে আবেদনকারীকে কিছু সাধারণ যোগ্যতা পূরণ করতে হয়। এগুলো হলো:
- আবেদনকারীর বয়স অবশ্যই ১৮ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।
- আবেদনকারীকে ব্র্যাকের স্থানীয় সমিতির সদস্য হতে হবে এবং নিয়মিত সঞ্চয় জমা রাখতে হবে।
- আবেদনকারীকে অবশ্যই বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে।
- ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা যাচাই করার জন্য একটি নির্দিষ্ট আয়ের উৎস বা ব্যবসার প্রমাণ থাকতে হবে।
- লোনের অর্থ কোন খাতে ব্যবহার করা হবে, তার একটি সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য থাকতে হবে।
লোন নিতে কী কী কাগজপত্র লাগে?
আবেদন প্রক্রিয়া সহজ হলেও, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কিছু জরুরি কাগজপত্র জমা দিতে হয়। নিচে এর একটি তালিকা দেওয়া হলো:
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)-এর ফটোকপি।
- আবেদনকারীর সদ্য তোলা ২-৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
- নমিনি বা জামিনদারের জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)-এর ফটোকপি ও ১ কপি ছবি।
- ঠিকানা প্রমাণের জন্য নাগরিকত্ব সনদ অথবা বিদ্যুৎ/গ্যাস বিলের সর্বশেষ মাসের ফটোকপি।
- ব্যবসার ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স (যদি থাকে)।
- কিছু বিশেষ লোনের ক্ষেত্রে ব্যাংক স্টেটমেন্টের প্রয়োজন হতে পারে।
সাধারণত এসব কাগজপত্র প্রয়োজন হয়ে থাকে। তবে, এর থেকে বেশি কাগজপত্র প্রয়োজন হলে ফিল্ড অফিসার আপনাকে জানিয়ে দিবে।
ব্র্যাক এনজিও লোনের প্রকারভেদ
ব্র্যাক বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের লোন বা ঋণ কর্মসূচি পরিচালনা করে থাকে। এর মধ্যে কয়েকটি জনপ্রিয় লোন পদ্ধতি হলো:
- প্রগতি (ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা লোন): ছোট ও মাঝারি ব্যবসা শুরু বা প্রসারের জন্য এই লোন দেওয়া হয়। এর পরিমাণ ব্যবসার ধরন অনুযায়ী নির্ধারিত হয়।
- দাবি (নারী উদ্যোক্তা লোন): গ্রামীণ হতদরিদ্র নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে এই জামানতবিহীন লোন চালু করা হয়েছে।
- কৃষি লোন: কৃষকদের ফসল উৎপাদন, বীজ ক্রয়, সার ও অন্যান্য কৃষি সরঞ্জাম কেনার জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।
- প্রবাসী লোন: যারা বিদেশে যেতে চান তাদের জন্য ‘মাইগ্রেশন লোন’ এবং প্রবাসীদের পরিবারের জন্য ‘রেমিটেন্স লোন’-এর ব্যবস্থা রয়েছে।
- শিক্ষা লোন: শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য এই বিশেষ লোন কর্মসূচি রয়েছে।
ব্র্যাক এনজিও ঋণের সুদের হার
অনেকের প্রধান আগ্রহের বিষয় হলো ব্র্যাক এনজিও ঋণ সুদের হার। ব্র্যাক একটি সামাজিক উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এর সুদের হার গ্রাহক পর্যায়ে সহনীয় এবং প্রতিযোগিতামূলক রাখা হয়।
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ব্র্যাকের সকল ঋণের সুদের হার ক্রমহ্রাসমান পদ্ধতি-তে গণনা করা হয়। এর মানে হলো, আপনি যখন ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেন, তখন শুধুমাত্র অবশিষ্ট আসলের ওপর সুদ প্রযোজ্য হয়। ফলে, কিস্তি দেওয়ার সাথে সাথে আপনার সুদের বোঝাও কমতে থাকে, যা ঋণগ্রহীতার জন্য একটি বড় সুবিধা।
লোনের পরিমাণ এবং প্রকারভেদের ওপর ভিত্তি করে সুদের হারে ভিন্নতা থাকতে পারে। যেমন:
- ক্ষুদ্র ঋণ (সাধারণত ১ লাখ টাকা পর্যন্ত): এই ধরনের লোনের সুদের হার নির্দিষ্ট থাকে।
- মাঝারি ও বড় অংকের ঋণ (১ লাখ টাকার বেশি): ব্যবসার ধরন ও ঋণের পরিমাণ অনুযায়ী সুদের হার প্রতিযোগিতামূলক রাখা হয়।
তবে, যেকোনো ধরনের লোনের ক্ষেত্রেই সুদের হার সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। তাই সবচেয়ে সঠিক ও হালনাগাদ তথ্য জানতে আবেদন করার পূর্বে আপনার নিকটস্থ ব্র্যাক শাখা থেকে সরাসরি কথা বলে নেওয়া উত্তম।
ব্র্যাক এনজিও লোন পাওয়ার পদ্ধতি
ব্র্যাক থেকে লোন পাওয়ার প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ। নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করলেই আপনি আবেদন করতে পারবেন:
- প্রথমে আপনার এলাকার নিকটস্থ ব্র্যাক অফিসে গিয়ে একজন কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করুন।
- ব্র্যাক সমিতির মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে। তাই আপনাকে তাদের সমিতির সদস্য হয়ে একটি সঞ্চয়ী হিসাব খুলতে হবে।
- সদস্য হওয়ার পর লোনের জন্য নির্ধারিত আবেদন ফরমটি সঠিকভাবে পূরণ করুন।
- ফরমের সাথে উপরে উল্লিখিত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করে জমা দিন।
- ব্র্যাকের একজন কর্মকর্তা আপনার বাড়ি বা ব্যবসার স্থান পরিদর্শন করে আপনার দেওয়া তথ্য যাচাই করবেন।
- সকল তথ্য সঠিক থাকলে আপনার আবেদনটি অনুমোদন করা হবে এবং ৭ থেকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে চেকের মাধ্যমে বা মোবাইল ব্যাংকিং-এ আপনার লোনের টাকা হস্তান্তর করা হবে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
ব্র্যাক থেকে লোন পেতে সর্বনিম্ন কত টাকা সঞ্চয় করতে হয়?
সঞ্চয়ের পরিমাণ লোনের ধরন ও শাখার নিয়মের উপর নির্ভর করে। বিস্তারিত জানতে আপনার স্থানীয় শাখায় যোগাযোগ করুন।
আমি কি একা লোন নিতে পারবো?
হ্যাঁ, ব্যক্তিগতভাবে লোন নেওয়া যায়। তবে সমিতির মাধ্যমে আবেদন করলে প্রক্রিয়াটি আরও সহজ হয়।
লোনের কিস্তি সময়মতো দিতে না পারলে কী করণীয়?
কোনো কারণে কিস্তি দিতে সমস্যা হলে দ্রুত ব্র্যাক অফিসে বিষয়টি জানাতে হবে। তারা আলোচনার মাধ্যমে একটি সহজ সমাধান খুঁজে বের করতে সহায়তা করে।
ব্র্যাকের শাখা কোথায় পাবো?
বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি উপজেলায় ব্র্যাকের শাখা রয়েছে। আপনার নিকটস্থ শাখার ঠিকানা জানতে ব্র্যাকের ওয়েবসাইট দেখতে পারেন অথবা স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিতে পারেন।
শেষ কথা
আশা করি, ব্র্যাক এনজিও লোন পদ্ধতি সম্পর্কে আপনি একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেয়েছেন। সঠিক পরিকল্পনা করলে ব্র্যাক এনজিও থেকে লোন নিয়ে আপনিও স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারেন। আরও কোনো প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট করতে পারেন অথবা সরাসরি আপনার নিকটস্থ ব্র্যাক শাখায় যোগাযোগ করুন।





