শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড এবং ব্যক্তিগত উন্নয়নের প্রধান সোপান। কিন্তু প্রতি বছর বাংলাদেশে হাজার হাজার মেধাবী শিক্ষার্থী শুধুমাত্র আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে তাদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দিতে বাধ্য হয়। এই বাস্তবতা উপলব্ধি করে দেশের অন্যতম আধুনিক ও গ্রাহকবান্ধব একটি প্রতিষ্ঠান, প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড, শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে তাদের বিশেষায়িত “স্টুডেন্ট লোন” সুবিধা নিয়ে।
আপনি যদি একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী শিক্ষার্থী হন অথবা আপনার সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হন, তবে প্রিমিয়ার ব্যাংকের এই শিক্ষাঋণ হতে পারে আপনার স্বপ্ন পূরণের পথে এক বিশ্বস্ত সঙ্গী। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা প্রিমিয়ার ব্যাংক স্টুডেন্ট লোন কী, এর সুবিধা, যোগ্যতা, আবেদন প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য সকল খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
Table of Contents
প্রিমিয়ার ব্যাংক স্টুডেন্ট লোন আসলে কী?
প্রিমিয়ার ব্যাংক স্টুডেন্ট লোন, যা ব্যাংকের “স্টুডেন্ট ক্রেডিট প্রোগ্রাম” নামেও পরিচিত, মূলত মেধাবী ও যোগ্য শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার পথে আর্থিক বাধা দূর করার জন্য ডিজাইন করা একটি বিশেষায়িত ঋণ সুবিধা। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো, শিক্ষার্থীরা যেন অর্থের অভাবে তাদের পড়াশোনা মাঝপথে থামিয়ে না দেয়।
এই লোনের আওতায় একজন শিক্ষার্থী দেশে বা বিদেশে পড়াশোনার জন্য বাৎসরিক সর্বোচ্চ ৮০,০০০ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা পেতে পারেন। এই অর্থ টিউশন ফি, পরীক্ষার ফি, বইপত্র কেনা, হোস্টেল বা আবাসন খরচ এমনকি বিদেশে পড়াশোনার ক্ষেত্রে বিমান ভাড়ার মতো প্রয়োজনীয় ব্যয় মেটাতে ব্যবহার করা যায়। University Grants Commission (UGC) অনুমোদিত যেকোনো কোর্সের জন্য এই লোন প্রযোজ্য।
এই লোনের প্রধান বৈশিষ্ট্য ও সুবিধাগুলো কী?
প্রিমিয়ার ব্যাংকের স্টুডেন্ট লোন বেশ কিছু গ্রাহক-বান্ধব বৈশিষ্ট্যের কারণে শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর অন্যতম আকর্ষণ হলো মাত্র ৯% বার্ষিক সুদের হার, যা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বেশ সাশ্রয়ী। শিক্ষার্থীরা প্রতি বছর সর্বোচ্চ ৮০,০০০ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারেন, যা তাদের বাৎসরিক খরচের একটি বড় অংশ মেটাতে সাহায্য করে।
সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর নমনীয় পরিশোধ ব্যবস্থা; পড়াশোনা শেষে চাকরি পেয়ে বা আয় শুরু করে লোনের কিস্তি পরিশোধ শুরু করা যায়, যা শিক্ষার্থীদের উপর থেকে মানসিক চাপ কমায়। ব্যাংকের শাখায় বা অনলাইনে এর আবেদন প্রক্রিয়াটিও বেশ সহজ ও দ্রুত।
স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এই লোনে কোনো গোপন চার্জ নেই এবং বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করলে প্রসেসিং ফির উপর ৫০% ছাড়ের বিশেষ সুবিধাও রয়েছে। ঋণের টাকা শুধু টিউশন ফির জন্যই নয়, বরং শিক্ষা সংক্রান্ত প্রায় সকল কাজেই, যেমন বই বা ল্যাপটপ কেনা এবং থাকা-খাওয়ার খরচেও ব্যবহার করা যায়।
লোন পাওয়ার জন্য কী কী যোগ্যতা লাগে?
প্রিমিয়ার ব্যাংক নিশ্চিত করে যে, তাদের এই বিশেষায়িত লোন যেন সঠিক ও যোগ্য শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছায়। তাই আবেদন করার জন্য কিছু যোগ্যতা পূরণ করতে হয়। আবেদনকারী শিক্ষার্থীকে অবশ্যই বাংলাদেশী নাগরিক হতে হবে এবং তার বয়স সর্বনিম্ন ১৮ বছর হতে হবে।
শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে, শিক্ষার্থীকে ন্যূনতম HSC বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে এবং দেশে বা বিদেশের যেকোনো UGC-অনুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির অফার লেটার বা প্রমাণপত্র দাখিল করতে হবে। আবেদনকারীর একজন আইনগত অভিভাবক বা জামিনদার থাকা আবশ্যক, যার একটি স্থিতিশীল আয়ের উৎস এবং ভালো ক্রেডিট রেকর্ড রয়েছে।
সাধারণত বাবা-মা বা নিকটাত্মীয় জামিনদার হয়ে থাকেন। সবশেষে, আবেদনকারী বা তার জামিনদারের নামে পূর্বে কোনো ঋণখেলাপের রেকর্ড থাকা চলবে না। উল্লেখ্য, উচ্চ GPA বা পরীক্ষায় ভালো ফল অর্জনকারী মেধাবী শিক্ষার্থীদের আবেদন অনুমোদনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
আবেদনের জন্য কী কী কাগজপত্র প্রয়োজন?
আবেদন প্রক্রিয়া সহজ করতে আগে থেকেই নিচের কাগজপত্রগুলো প্রস্তুত রাখুন:
| ডকুমেন্টের ধরন | প্রয়োজনীয় বিবরণ |
| পরিচয়পত্র | আবেদনকারী ও জামিনদারের জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)/পাসপোর্ট/জন্ম সনদের সত্যায়িত ফটোকপি। |
| ছবি | আবেদনকারী ও জামিনদারের সদ্য তোলা ২-৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি। |
| শিক্ষাগত প্রমাণপত্র | সকল বোর্ড পরীক্ষার (SSC, HSC) সার্টিফিকেট ও মার্কশিটের সত্যায়িত কপি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির অফার লেটার/ভর্তির প্রমাণপত্র এবং স্টুডেন্ট আইডি কার্ডের কপি। |
| আয়ের প্রমাণপত্র | জামিনদারের আয়ের প্রমাণপত্র (যেমন: চাকরির স্যালারি সার্টিফিকেট, ট্রেড লাইসেন্স, শেষ ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট, TIN সার্টিফিকেট ইত্যাদি)। |
| ঠিকানার প্রমাণপত্র | আবেদনকারী ও জামিনদারের বর্তমান ঠিকানার প্রমাণ হিসেবে বিদ্যুৎ/গ্যাস/পানি বিলের সাম্প্রতিক কপি। |
| অন্যান্য | সঠিকভাবে পূরণকৃত ঋণের আবেদন ফরম এবং ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী অন্যান্য KYC ডকুমেন্টস। |
প্রিমিয়ার ব্যাংক স্টুডেন্ট লোন আবেদন প্রক্রিয়া
প্রিমিয়ার ব্যাংক স্টুডেন্ট লোনের জন্য আবেদন প্রক্রিয়াটি কয়েকটি সহজ ধাপে সম্পন্ন করা হয়। প্রথমে, শিক্ষার্থীকে তার পড়াশোনার মোট খরচ হিসাব করে ব্যাংকের ওয়েবসাইট (www.premierbankltd.com) বা নিকটস্থ শাখা থেকে লোনের নীতিমালা অনুযায়ী নিজের যোগ্যতা যাচাই করে নিতে হবে। এরপর, প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র, যেমন পরিচয়পত্র, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, ভর্তির প্রমাণপত্র এবং জামিনদারের আয়ের প্রমাণপত্র সংগ্রহ ও সত্যায়িত করতে হবে।
কাগজপত্র প্রস্তুত হয়ে গেলে ব্যাংকের শাখা থেকে আবেদন ফরম সংগ্রহ করে তা নির্ভুলভাবে পূরণ করতে হবে এবং কাগজপত্রসহ নির্দিষ্ট ডেস্কে জমা দিতে হবে। আবেদন জমা দেওয়ার পর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আবেদনকারী ও জামিনদারের দেওয়া সকল তথ্য যাচাই-বাছাই করবে, যার মধ্যে জামিনদারের ক্রেডিট হিস্ট্রি (CIB Report) পরীক্ষাও অন্তর্ভুক্ত। সব তথ্য সঠিক থাকলে এবং ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট হলে আবেদনটি অনুমোদন করা হয় এবং ঋণের টাকা শিক্ষার্থীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করে দেওয়া হয়।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
প্রিমিয়ার ব্যাংক স্টুডেন্ট লোনের সুদের হার কত?
এই লোনের বার্ষিক সুদের হার ৯%, যা একটি ফিক্সড রেট।
বিদেশে পড়াশোনার জন্য কি এই লোন পাওয়া যায়?
হ্যাঁ, পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রসেসিং ফির উপর ৫০% ছাড় প্রদান করে থাকে।
জামিনদার ছাড়া কি লোন পাওয়া সম্ভব?
সাধারণত এই লোনের জন্য একজন স্থিতিশীল আয়ের জামিনদার (বাবা-মা/অভিভাবক) আবশ্যক।
লোন অনুমোদন হতে সাধারণত কতদিন সময় লাগে?
সকল কাগজপত্র ঠিক থাকলে সাধারণত ৭ থেকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যেই লোন অনুমোদন হয়ে যায়।
পড়াশোনা শেষ হওয়ার কতদিন পর থেকে কিস্তি শুরু হয়?
কোর্স শেষ হওয়ার পর একটি নির্দিষ্ট গ্রেস পিরিয়ড (সাধারণত ৬ মাস থেকে ১ বছর) থাকে। এরপর থেকে কিস্তি পরিশোধ শুরু করতে হয়।
শেষ কথা
প্রিমিয়ার ব্যাংক স্টুডেন্ট লোন বাংলাদেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য শুধু একটি আর্থিক সহায়তা নয়, এটি তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার এবং আত্মবিশ্বাস নিয়ে ভবিষ্যৎ গড়ার একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। এর সাশ্রয়ী সুদের হার এবং নমনীয় পরিশোধের শর্তাবলী এটিকে দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষাঋণে পরিণত করেছে।
উচ্চশিক্ষার পথে আর্থিক বাধাগুলো এখন আর আপনার স্বপ্নকে আটকে রাখতে পারবে না। আরও বিস্তারিত জানতে আজই আপনার নিকটস্থ প্রিমিয়ার ব্যাংকের শাখায় যোগাযোগ করুন অথবা তাদের হেল্পলাইন নম্বরে (১৬৪১১) কল করুন।





